রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৩

ভালোবাসার টানে :

Picture
চৈত্রের দুপুর।প্রকাণ্ড শিরিষ গাছের ছায়া এসে পড়েছে টুসীদের বারান্দায়।সেই ছায়ার নিচে বারান্দায় হেলান দিয়ে বসে একটা গল্প লেখার চেষ্টা চানিয়ে যাচ্ছে সে।দুটো লাইন লিখে;আবার কাটে।বিষয়টাযেন মনঃপুত হয় না তার।এখনো স্থির করতে পারছে না কিভাবে শুরু করবে।শুধু একটার পর একটা কাগজ নষ্ট করে যাচ্ছে।
‘আচ্ছা,ছাগলটাকে ­ নিয়ে লিখলে কেমন হয়?’মনে মনে ভাবছে সে।ওর কথা মনে পড়তেই মুখটা লাজে রাঙ্গা হয়ে ওঠে।
‘ছাগলটা কি আমার মনের কথা বোঝে না?নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে?’এটা ভেবে পরক্ষ্ণণেই আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
‘ওর যা মাথা,কখনোই বুঝবে না!আচ্ছা,আমি ওকে কিভাবে বলব?ছাগল,আমি সারাজীবন তোর কাঁঠালপাতার স্পন্সর হতে চাই?হা হা হা!’ হাসতে থাকে টুসী।
ছাগলটার নাম অয়ন।টুসীর সাথেই পড়ে।এইচ।এস।সি। দিয়েছে দুজনে এবার।সেই পিচ্চিবেলা থেকে বন্ধুত্ব তাদের।একসাথে পড়েছে,খেলেছে,পা ­হাড় চষেছে।ক্লাসের পড়া আর খেলনা শেয়ার করতে করতে কখন যে মনের সব কথা শেয়ার করতে শুরু করেছে জানে না এদের কেউই।
সেই ছোটবেলা থেকেই পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে নতুন প্রজাতির গাছ খুঁজে বের করা টুসীর নেশা।তাদের এলাকায় কোন গাছের কি নাম,কি তাদের গুন সব মুখস্থ বলে দিতে পারে সে।বনজংগলে একা একা ঘোরা মায়ের কঠোর নিষেধ।কিন্তু কে শোনে কার কথা!অয়ন যদি কখনো বলে, ‘আন্টি দেখে ফেললে?’ সে অকপটে উত্তর দেয়, ‘দেখলে দেখবে!আমি কি আর একা ঘুরছি নাকি?তোকে দেহরক্ষক রেখেছি কি করতে?’
অত্যন্ত খাঁটি কথা।সে তো আর একা যাচ্ছে না।আর কিছু বলতে পারে না অয়ন।মেয়েটির সব কথা সে মেনে নেয় চোখ বুজে।
এদের বন্ধুত্বটা কিভাবে হল সেটিও ভাববার বিষয়।দুজনসম্পূর্ণ বিপরীত স্বভাবের।টুসী চঞ্চলমতি,অস্থির ­মনা।সারাক্ষণ শুধু পটর পটর করবে।আর সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়বে নতুন কোনো গাছের সন্ধানে।অপরদিকে ­ অয়ন শান্তশিষ্ট,চুপচ ­াপ ধরনের।যত কম কথা বলতে পারে,ততই যেন তার শান্তি।হ্যাঁ,না ­ বলে প্রশ্নের জবাব শেষ করতে পারলেই সে পালিয়ে বাঁচে।তার প্রধান কাজ হল টুসীর সাথে সাথে ঘোরা আর তার কথা মনযোগ দিয়ে শোনা।শুনতে হয় কারন টুসীর ধারনা যে তার কোনো কথাই শোনে না।তাই কথা বলতে বলতে হঠাত প্রশ্ন করে বসে, ‘এতক্ষণ কি বলেছি বল।’ঠিকমত জবাব দিতে না পারলে খুব রেগে যায় সে।একবার তো এক সপ্তাহ কথা বলেনি।তখন কি যেকষ্ট হয়েছিল!তাই সে টুসীর প্রত্যেকটা কথা মন দিয়ে শোনে।

‘পাগলীটা এমন কেন?’ভাবছে অয়ন।‘সেদিন বলা নেই,কওয়া নেই হঠাত বৃষ্টি নামল আকাশ ভেঙ্গে।সেই সাথে তুমুল বজ্রপাত।এই সময়ে মেয়েটা কিনা ঘর থেকে বেরিয়ে খোলা মাঠের দিকে ছুটে গেল।একটা মানুষ বৃষ্টি এত ভালোবাসতে পারে!নিজের কোনো খেয়াল নেই!যদি কিছু হয়ে যেত!’

টুসী এখন গল্প লেখার কথা বেমালুম ভুলে গেছে।তার অয়নের কথা ভাবতেই বেশি ভালো লাগছে।সেদিন মুভি দেখার সময় কি কাণ্ডটাই না হয়েছিল!সে চাইছিল অয়ন তার হাতটা ধরুক।কিন্তু গাধাটা এমন ফ্যালফ্যাল করে পর্দার দিকে তাকিয়ে ছিল!তখন টুসী ইচ্ছে করেই তার হাতটা অয়নের হাতের খুব কাছে রাখল।কিন্তু উনার খবর নাই!নিবিষ্টমনে মুভি দেখেই যাচ্ছেন!এত্ত রাগ হল!ইচ্ছে করছিল একটা একটা করে গাধাটার চুল ছিঁড়তে।হঠাত একটা হাতের স্পর্শ তার শরীরে অদ্ভুত শিহরণ বইয়ে দিয়ে গেল।অয়ন তার হাত ধরার চেষ্টা করছে।সে আড়চোখে দেখল বেচারা সংকোচ বোধ করছে।যদি টুসী রাগ করে!একটু ছুঁয়েই হাত সরিয়ে ফেলল অয়ন।
‘ধুর গাধা!আমি কি হাতটা সরিয়ে ফেলতাম নাকি!ছাগল একটা!’মনে মনে বলল টুসী।এরপর অয়নের দিকে এমনভাবে তাকালো যেন চোখ দিয়েই খেয়ে ফেলবে তাকে।
‘স্যরি। এত্তবড় ভুল আমার কি করে হয়ে গেল আমি নিজেই জানি না।হঠাত করে তোর হাতটা আমার হাতে এসে লাগাতে আমার কেন জানি তোর হাতটা ধরতে ইচ্ছে করল।তুই রাগ করিস নি তো?’ভয় পাওয়া গলায় বলছিল অয়ন।
সেই মুহূরতে একটু রাগ দেখিয়েছিল টুসী।কিন্তু মনে মনে তো সে খুশিই হয়েছিল।

অয়ন বুঝতে পারছে না কিভাবে সে তার মনের কথা বলবে।টুসীকে তার বেশ ভয় লাগে।ও যেরকম মেয়ে,কখনো কারো প্রেমে পড়বে বলে মনে হয় না।পাছে বন্ধুত্বটাই না নষ্ট হয়ে যায়।
আজ সে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।চোখমুখ শক্ত হয়ে আসে তার।

রাতে টুসী তার মা-বাবার সাথে খেতে বসেছে।বাবার মুখের দিকে তাকিয়েই সে চিমসে গেল।এত রেগে আছে কেন?এম্নিতেই বাবাকে বেশ ভয় পায় সে।এখন তো প্রাণটাইবের হয়ে হাতে চলে আসতে চাইছে।
খাবার টেবিলে কেউ কোনো কথা বলল না।রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় রাদিত সাহেব তার মেয়েকে ডাকলেন।
‘তোমাকে একটা ইম্পরট্যান্ট কথা বলার জন্য ডেকেছি।বস।’
‘জ্বী,আব্বু।’
‘তোমার ওই বন্ধুটার নাম কি যেন?সবসময় তোমার পেছন পেছন ঘুরঘুর করে?’
‘অয়ন।’
‘ওর সাথে তোমার মেলামেশা আমার পছন্দ না।’
টুসী চুপ করে রইল।
‘রুনুর কথা মনে আছে?’
‘জ্বী।’
টুসীর সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল ওর ফুফাতো বোন রুনু।তার ভালোবাসার মানুষটিকে পরিবার মেনে নেয়নি দেখে গোপনে বিয়ে করে তারা।সেইদিন থেকে এই পরিবারের সাথে তার সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন বাবা।
‘যদি কখনো শুনি কোনো ছেলের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে তাহলে তোমাকে আমি ত্যাজ্য করব।এলাকায় তোমার বাবার একটা স্ট্যাটাস আছে।তোমার কারণে যেন সেটিতে কোনো দাগ না লাগে।মানুষ মুখিয়ে আছে এই পরিবারের সুনামে কলঙ্ক লেপে দিতে।তাই সবসময় সাবধানে থাকবে।’
টুসী মাথা নিচু করে সব শুনে গেল।
‘এখন যাও।’
রুমে এসে লাইট বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করল টুসী।একসাথে অনেকগুলো ভাবনা তার মাথায় চেপে বসেছে।কিছুক্ষণ এরকম থাকার পর একসময় মাথার ভেতরটা একদম ফাঁকা হয়ে গেল।এই সময় তার বোধ শক্তিও কাজ করছিলনা।অতীত বর্তমান ভবিষ্যত যেন এক মুহূর্তে লয় পেয়ে গিয়েছিল।কয়েক সেকেন্ড বাদেই তার বাঁ চোখ উপচে বন্ধ পাতার কোণ দিয়ে একটা অবাধ্য জলের ধারা গড়িয়ে গেল কানের দিকে।সে মোছার চেষ্টা করল না।

আকাশে খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে।একটা জিনিস এত্ত সুন্দর,এত্ত সুন্দর কিভাবে হয়?ভূতের মত হা করে তাকিয়ে আছে অয়ন।সে ঠিক করেছে প্রতি কৃষ্ণপক্ষের রাতে টুসীর হাত ধরে চাঁদ দেখবে।জোতস্নাস্ ­নান করবে।আর টুসীর কন্ঠে রবীন্দ্রসংগীত শুনবে।
ঘড়ি টিকটিক করে উঠল।আর মাত্র আধা ঘন্টা সময় হাতে আছে।ঠিক ১২টা বাজলেই টুসীকে ফোন করবে সে।বলে দেবে তার ভালোবাসার কথা।ঘুম ভেঙ্গে এসব শুনে মেয়েটা কি চমকানোটাই না চমকাবে।এই প্রথমবার অস্থির হতে দেখা যায় স্থিরমনা ছেলেটিকে।

টুসী জেগেই ছিল।বালিশে মুখ গুঁজে আছে সে।একটু ভালো করে লক্ষ করলেই দেখা যাবে সে কাদঁছে।নিশ্চুপে ­।শুধু জল গড়িয়ে পরছে তার গাল বেয়ে।এমন সময় মোবাইলের ভাইব্রেশনটা বেজে উঠল।স্ক্রিন না দেখেই ফোনটা রিসিভ করল সে।
ওপাশ থেকে একটা পুরুষালি কন্ঠ বেজে উঠল, ‘হ্যালো,টুসী?’
সে কোনো জবাব দেয় না।কন্ঠটা চিনতে অসুবিধে হয়না তার।
‘কি সুন্দর জোতস্না হয়েছে দেখেছিস?দাঁড়া একটা গান শুনাই তোকে। ’ওপাশের মানুষটি তাকে কথা বলার সুযোগ দেয় না।যেন আজ শুধু তারই কথা বলার দিন।
গিটার বাজিয়ে গান শুরু হয়...যখন নিঝুম রাতে...সবকিছু চুপ...নিষ্প্রাণ ­ নগরীতে ঝিঁঝিঁরাও ঘুম...আমি চাঁদের আলো হয়ে...তোমার কালো ঘরে জেগে রই সারা নিশি...এতটা ভালবাসি........ ­.টুসী,তোকে খুব ভালোবাসি রে।’
আবেগ জড়ানো কন্ঠটা চিনতে অসুবিধা হয় না তার।কিন্তু পুরো সময়টাতেই মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হয় না।কেউ যেনআঠা দিয়ে সেঁটে দিয়েছে তার মুখটা।শুধু দুচোখ বেয়ে জল গড়ায়।ফোনটা কেটে দেয় টুসী।সে চায়না অয়ন তার কান্না শুনুক।
‘হ্যালো...টুসী. ­..হ্যালো...ফোনট ­া কেটে দিল কেন?’ধাক্কা লাগে অয়নের বুকে।‘কিছু হয় নি তো আবার?নাকি ফোনটা অন্য কেউ ধরেছিল?’ টুসীর বাবার কথা মনে হতেই আতংকে জমে যায় সে।প্রচণ্ড যন্ত্রণা আর ভয়ে বুকটা চিরে যেতে চায়।এত কষ্ট হচ্ছে কেন?লোনা পানির ধারা নারী-পুরুষ মানে না।

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।এরই মধ্যে টুসী তার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলেছে।তার চোখফেটে জল নামছে।নামুক।প্র ­তিটা মেয়েই তার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় চোখের পানি ফেলে।
বি.দ্র.-গল্পের উপসংহারটা আমি পাঠকদের হাতেই ছেড়ে দিলাম।ভাবুন না আপনারা আপনাদের ইচ্ছামত!আশাবাদী ­ হলে ধরে নিন সে সমাজের,পরিবারের ­ বন্ধন ছিন্ন করে ভালোবাসার টানে ছুটে গেছে।আর আমার মত নিরাশাবাদী হলে সমাজের কাছে তাকে মাথা নুইয়ে ভালোবাসার কাছে হেরে যেতে দিন।

লাবণীর কান্না ঃ

যেদিন লাবণী কেঁদেছিল

লিখেছেন লাবণী

একটু আগে লাবনী গেলো । রিকশায় করে , লাল জামা পড়ে । প্রতিদিনই অরণ্য দারিয়ে থাকে লাবনীকে এক ঝলক দেখার আশায় । তবে ভাব করে যেন কোথাও যাচ্ছে । এই নিয়ে ৭ম বার হল , মুখ ফুটে "কোথায় যাও" ছাড়া আর কিছু বলতে পারলনা । অনেক কিছু বলার ছিল লাবনীকে , এক ঝলক দেখলে অরণ্য মন কেমন অশান্ত হয়ে উঠে । অশান্তিকে তো খারাপ লাগার কথা । কিন্তু এই অশান্তিকে অরণ্যর ভালই লাগে । কেমন যেন একটা মধুর জ্বালাতন থাকে সারাটাদিন । হয়ত একেই ভালবাসা বলে।
আজ পহেলা বৈশাখ , ১৪ই এপ্রিল । হিসাবমতে আজ বাংলা নববর্ষ । কিন্তু এই দিনকে আজকাল কেন জানি অরণ্যর কাছে ভ্যালেন্টাইন্স ড্যা এর মত মনে হয় । মা - বাবার চোখ ফাকি দিয়ে মেয়েরা লাল শাড়ি পড়ে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি পড়ে রিকশায় করে ঘুরাঘুরি করে । এই দিনে আপনি রিক্সার দিকে তাকান , দেখবেন ৪টা রিক্সার মধ্যে ৩টাতেই একজন তরুন এবং একজন তরুনি হাত ধরে একজন আরেকজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । দুইজনের চোখ দিয়েই অনেক কথা বলা হয়ে যায় । সব প্রেম প্রকাশ হয়ে যায় চোখের পাতায় বেড়িয়ে আসার আপ্রান চেষ্টায় থাকা দু ফুটা চোখের জল । এই প্রমের দৃশ্যগুলা দেখতেও একটা অন্যরকম আনন্দ আছে । কেও মনে হয় সত্যি ই বলেছেন " প্রেম স্বর্গ থেকে আসে " ।
অরন্য তাই এই দুই নম্বর ভালবাসা দিবসকেই ভালবাসা নিবেদনের জন্য পছন্দ করে নিলো । সে হ্যা করুক আর নাই করুক । অরন্যর হাতের লাল গোলাপ ছুড়ে মারুক মুখের উপর , বাম হাত দিয়ে সবার সামনে চড় মারুক তবুও শুধু লাবনীকে জানাতে চায় যে এই পৃথিবীতে একজন আছে যে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লাবনীকে ভালবাসবে । বুকের গভিরোতম অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হবে শুধু তার ভালবাসার জন্য ।

লাবনীকে অরন্য হয়তো কখনও ভালবাসি বলত নাহ । ওর ভয় যদি লাবণী ওকে ভুল বুঝে ? ও যদি বলতে না পারে যে ও লাবনীকে কি রকম ভাবে ভালবাসে তাহলে তো ওর প্রেম বৃথা যাবে । হয়তো লাবণী বুঝবেনা অরন্যের এই হৃদয়ের প্রতিটি হৃদস্পন্দন কেমন করে ভালবাসি ভালবাসি করে হাহাকার করে । কিন্তু সেদিন আমি ওকে বললাম যে এইরকমে লুকিয়ে লুকিয়ে আর কতদিন ভালবাসবি ? এই রকম "কেহ দেখিবে না মোর গভির প্রণয় , কেহ জানিবে না মোর অশ্রুবারিচয় " আর কত করবি ? গিয়ে বলে দে না গাধা । এত ভয় কিসের ?
অরন্যঃ "কিন্তু তানিয়া , ও যদি না করে তাহলে ?"
আমি বললাম (তানিয়া) "না করলে করবে । কিন্তু মনের কথা এর জন্য গোপন রাখবি?"
অরন্যঃ "তর কথাও ঠিক । বলতে হবে আমাকে । আমার প্রেম সত্যি হলে অবশ্যই হ্যা করবে । "
এই হল অরন্যর প্রেম নিবেদনের সাহসের জোগান । জোগানদাতা হলাম আমি , তানিয়া ।
" আমি তোমাকে ভালবাসি" , পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বলা কথা । সবচেয়ে কঠিন কথাও মনে হয়। এবং অবশ্যই সবচেয়ে সুন্দর কথা । যতই ভালবাস না কেন , ভালবাসি বলা ততটাই কঠিন । যত বেশি ভালবাস, তত বেশি হারানোর ভয় । আজকের জন্য অরন্যর সব ভয় দূরে থাক । আজকে অরন্যকে বলতেই হবে , হয়তো কাল কখনো আসবেনা ।

লাবনীকে দেখা যাচ্ছে । পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে নৌকায় পা দুটো দুলিয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে । কতো সুন্দর হাসি । শুধু এই হাসিটা সারাজিবন দেখার জন্য অরন্য নিজের জীবন দিয়ে দিতে পারবে । এই হাসির জন্য অরণ্যর জীবন দিতেও কনো আফসোস নেই । অরণ্য পাঞ্জাবির পকেট থেকে লাল গোলাপটা বের করল । লাবণী এখন নৌকা থেকে নামল । অরন্যকে এখন সেই তিনটা শব্দ বলা লাগবে । লাবণী নৌকা থেকে নেমে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে মাঠের সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে । গোলাপ হাতে নিয়ে অরণ্যও আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে লাবনীর দিকে । ধুপপপপ !!! কাহিনিতে নতুন চরিত্রের প্রবেশ ! রোহিত ।
লাবণী অরণ্যর কাছাকাছি আসার আগেই রোহিতের হাত ধরে চলে গেলো । হয়তো একেবারেই চলে গেলো । অরন্যর হাতের লাল গোলাপ নিচে পড়ে গেলো । শরীর ভরশুন্য হয়ে গেলো । গোলাপটা তুলতে চাইল অরণ্য । আর যাই হোক প্রথম প্রেমের প্রথম গোলাপ তো । লাবণীকে ভালবাসার স্মৃতি জড়িয়ে আছে এতে । হয়তো এই গোলাপ নিয়েই সারাজীবন বেঁচে থাকতে হবে , সারাজীবন ।
তিন দিন পরঃ
তো কি হয়েছে লাবণী অন্য কাওকে ভালবাসে ? অরণ্যও বাসে । সবচেয়ে বেশি বাসে । লাবণী অন্য কাউকে ভালবাসে তারমানে এই না যে অরন্যকে ভুলে যেতে হবে । অরন্যর ভালবাসা অরন্য অবশ্যই প্রকাশ করবে । লাবণী হ্যা করুক আর নাই করুক , শুধু জানাতে চায় যে এই পৃথিবীতে অরন্যর শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত অরন্য লাবনীকে ভালবাসবে । প্রেম নিবেদনের জন্য সেই সাহস এখন আর অরন্যর মনে নেই । তাই এক বোতল ভোদকা গলাধঃকরণ করলো ।

অরন্য এখন লাবনির দুইতালা বাসার বারান্দার গ্রিলে ধরে দাঁড়িয়ে আছে । চোখ লাল হয়ে আছে , মাথার চুল উশকোখুশকো হয়ে আছে । হাত এবং শরীর ক্রমাগতভাবে কাপছে । যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে দুইতালা থেকে নিচে । আগে থেকে কুড়িয়ে আনা ঢিল লাবনীর কাছের আলমারিতে মারলো । সরাসরি লাবনীর গায়ে মারতে পারতো কিন্তু লাবনীকে আঘাত করা অরন্যর পক্ষে সম্ভব না । লাবণী ঘুম থেকে উঠলো । তারপর চিৎকার দিতে গিয়েও মুখ সামলিয়ে আস্তে আস্তে বারান্দায় চলে আসল ।
লাবনিঃ এত রাতে বারান্দায় ঝুলতেছ কেন ? সমস্যা কি ?
অরন্যঃ সমস্যা একটাই । তোমার কথা কখনই ভুলতে পারি না ।তোমার প্রেমে পড়ে গেছি । যেখানেই তাকাই শুধু তুমি আর তুমি । যেখানেই যাই শুধু তোমার হাত খুঁজি ধরার জন্য । পড়তে বসলে তোমার কথা মনে পরে । আর যখন সবকিছু বাদ দিয়ে ঘুমাতে যাই তখন তুমি স্বপ্নে এসেও হানা দাও । এসে সেই ভুবন ভুলানো হাসি দাও আমার দিকে তাকিয়ে , আমি তো তখনই প্রেমে পড়ে যাই ।
লাবণীঃ অরন্য তুমি জানো রোহিতের সাথে আমার রিলেশন আছে । তাহলে এই পাগলামির মানে কি ?
অরন্যঃ কারন আমি তোমাকে ভালবাসি । ওই রোহিত থেকে অনেক বেশি ভালবাসি । সবার থেকে বেশি । তোমাকে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাই । তুমিই প্রথম প্রেম , তুমিই শেষ ।
লাবনিঃ প্রথম প্রেম বলতে কিছু নেই । প্রেম বারবার হতে পারে ।
অরন্যঃ তাও ঠিক । আমার জীবনে প্রেম একটাই । কিন্তু ফিরে আসে বারবার । যতবার তোমাকে ভুলে যেতে চাই , ততবার আরো বেশি করে প্রেমে পড়ি ।লাবনিঃ অরণ্য , তুমি আমার ভাল বন্ধু । তোমার ভালর জন্যই বলছি । আমাকে ভালবেসে কোন লাভ হবে নাহ । শুধু কষ্টই পাবে । তাই ভাল হয় যদি ভুলে যেতে পারো ।
অরন্যঃ দি লাভ ক্ষতি হিসাব করে প্রেমে পড়তাম তাহলে তো আর তোমাকে ভালবাসতাম না । তোমার ওই চোখ দুটা , ওই হাসিটা আমাকে প্রেমে ফেলে দিয়েছে । এই প্রেম থেকে আমি কি পাব তা কখনো চিন্তা করি নি । চিন্তা করতে চাইও না । আমি শুধু জানি যে লাবণী নামের একটা মেয়েকে আমার জীবনের সব প্রেম , ভালবাসা দিয়ে দিয়েছি । পারলে আমার এই জীবনটাও দিয়ে দিতাম । একবার এই প্রান চেয়ে দেখো , জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে তোমার হাতে এই প্রান তুলে দিব ।
লাবনিঃ বাসায় গিয়ে একটা ঘুম দাও । সকালে উঠে দেখবে সব পাগলামি চলে গেছে । এই এইজে প্রেম হয় না , এটা শুধু কিছুদিনের ইমোসন । কয়েকদিন পরে চলে যাবে ।
অরন্যঃ ( লাফ দিয়ে নিচে নেমে , চিৎকার করতে করতে ) লাবণী , শুধু জানাতে এসেছিলাম আমার মনের কথা । শুধু জানাতে এসেছিলাম যে এই পৃথিবীতে কেউ একজন তার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে ভালবাসবে । তুমি চাও না চাও আমি তোমাকে ভালবাসব । এর কারন এই না যে অন্য কোন মেয়ে পাই না । এর কারন এই যে তুমি আমার প্রথম প্রেম , এবং শেষ । মরার আগ মুহূর্তেও বলব "লাবণী আমি তোমাকে ভালবাসি" , আই প্রমিস ।
লাবনিঃ টাটা।
অরন্যঃ নেভার স্যা নেভার লাবণী । এই জীবন অনেক বড় । একবার না একবার তো দেখা হয়েই যাবে ।
তিন বছর পরঃ
আমরা পিকনিকে যাচ্ছি । কক্সবাজার থেকে এখন সেন্ট মার্টিন যাচ্ছি । ৩০ জন ছাত্রছাত্রী এবং ২০ জন শিক্ষক । সাথে আমি, অরণ্য , রোহিত এবং লাবণী । হ্যা , লাবনীকে অরণ্য এখনো ভালবাসে । এখনো লাবনীর রোহিতের সাথে সম্পর্ক আছে । কিন্তু এখন আরো অনেক বেশি ভালবাসে । এখনও এক মুহূর্তের জন্য লাবণী অরণ্যর মন থেকে যায় না । ও অরন্যকে ভালবাসুক না বাসুক অরণ্যর ভালবাসা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে ।
রোহিত আর লাবনীকে দেখা যাচ্ছে । লঞ্চের ছাদের উপর । ওরা টাইটানিকের পোজ দিতে চাইছে । অরন্য আমাকে বলল " গাধায় এটাও জানে না যে টাইটানিকের পোজে ছেলেকে পিছনে দাড়াতে হয় " । আরে ওরা কোথায় যাচ্ছে ? একেবারে লঞ্চের উপরের ছাদে চলে গেলো ওরা । কেউ নেই ওইখানে । জায়গাটা একটু বিপদজনক ।
লাবনীর হাত ধরে রোহিত একবার ওকে ঘুরাল । ওরা নাচছে । আস্তে আস্তে নাচার গতি বাড়তে থাকল । রোহিত লাবনীর হাত ধরে ঘুরিয়ে বামদিকে নিলো তারপর অন্যহাত দিয়ে আবার সামনে আনলো । তারপর একহাত দিয়ে দূরে ঠেলে দিয়ে আবার কাছে আনলো । কাছে এনে লাবনীকে কোলে নিতে চাইলো । রোহিত ভারসাম্য রাখতে পারলনা । রোহিত ধাক্কা খেয়ে পিছনে সরে গেলো । তারপর রোহিত ঘুরে গেলো । ওর সামন চলে গেলো রেলিঙের দিকে । লাবণী এখনও রোহিতের কোলে । রেলিঙে রোহিতের হাত ঝারি খেলো । রোহিত হাতে ব্যাথা পেয়ে লাবনীকে হাত থেকে ছেড়ে দিলো । নাহ !!! লাবণী সোজা তিনতলা থেকে একেবারে নিচে পানিতে পড়ে গেলো । "রোহিত" , রোহিত" , বলে চিৎকার করতে থাকল । রোহিত নিচে নেমে গেলো । ৩০ জন ছাত্র ছাত্রি এবং ২০ জন শিক্ষকের সবাই রেলিঙের পাশে চলে এল । লাবণী শ্বাস নিতে পারছেনা । একবার ডুবছে আবার ভাসছে । এখনও লাবণী "রোহিত , রোহিত" বলে চিৎকার করছে । আর রোহিত চিৎকার করছে "কেউ লাবনীকে বাচাও , কেউ একজন বাচাও" । তারপর আরেকটা ঝাপের শব্দ শুনলাম । দুইতলা থেকে কেউ একজন ঝাপ দিয়েছে । হয়তো রোহিতের চিৎকার শুনেই লাফ দিয়েছে । নাহ , যে লাফ দিয়েছে সে রোহিতের চিৎকার শুনে লাফ দেয় নি । সে লাফ দিয়েছে তার ভালবাসার জন্য । অরন্য দুইতলা থেকে লাফ দিয়েছে পানিতে । আর আমার মাথায় শুধু একটা কথাই এল "অরণ্য সাতারের কিছুই জানে না" ।
৭ দিন পর: অরণ্য এখনো কোমায় আছে । ডাক্তার বলেছেন ওর ফুসফুসে নাকি পানি ঢুকেছে । পানি না বের করলে ওর শ্বাস নিতে সমস্যা হবে । আবার কোমায় থাকলে অপারেশনও করা যাবে না । যখন কোমা থেকে ফিরে আসবে ঠিক তখনই অপারেশন করা লাগবে ।
লাবণী এই সাত দিন ধরে হাসপাতালে বসে ছিল । আমি যখন খাবার নিয়ে ওর কাছে আসলাম , ও আমাকে বলল , " আমি একটু অরণ্যকে দেখতে পারব ? " । আমি কিছুক্ষন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । ওর চোখে যা দেখলাম তা কখনও আগে ওর চোখে দেখিনি । রোহিতের সাথে থাকার সময় তো কখনোই দেখি নি , দেখেছিলাম শুধুই বিভ্রান্তি । আজকে দেখলাম অন্য কিছু , পবিত্র ।
লাবণী অরণ্যের বেডের পাশে বসে আছে । অরণ্য জীবন মৃত্যুর মধ্যে । আর লাবণী নেই ওর নিজের মধ্যে । লাবণী কথা বলা শুরু করল ।
অরণ্য , জানি না তুমি কোন সময় জেগে উঠবে । যত দেরিই কর না কেন , আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব । তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে , অনেক কিছু অরন্য । ৩ বছর আগে তুমি বারান্দায় ঝুলে যে কথা গুলো বলেছিলে আর আমি হেসেছিলাম সেই কথা গুলো আজকে তোমাকে বলতে চাই । এই রকম অনুভূতি আমার কখনও হয় নি । কি রকম একটা ব্যাথা মনের ভিতর । কিছু একটা হারানোর ভয় সারাক্ষন । আমি এই ব্যাথা নিয়ে ২ দিনও থাকতে পারবনা । তুমি ৩ বছর ধরে কিভাবে থাকলে ? এই অরন্য , শুনছো ? শুধুমাত্র ভালবাসলেই এই ব্যাথা সহ্য করা যায় । আমি কি করতে পারব ?
অরন্য জেগে উঠল । আস্তে আস্তে বলল , " লাবণী ভাল আছো ? "
লাবণী কেঁদে ফেলল । অশ্রু লোকানোর কোনো চেষ্টা করলনা ।
অরন্যঃ আমি তো শুধু কেমন আছ জিজ্ঞেস করলাম । এতে কাঁদার কি হল ?
লাবনীঃ ( নিশ্চুপ ) ।
অরন্যঃ "লাবনী , আমি বলেছিলাম না আমি তোমাকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভালবাসবো ? আমি আমার কথা রেখেছি লাবণী । আমি এখনও তোমাকে ভালবাসি । লাবণী শেষবারের মত বলি , আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি । যাই লাবণী , ভাল থেকো " , বলে অরণ্য লাবণীর গালে আস্তে করে একটু হাত দিয়ে ছুঁতে চাইল । লাবণী গাল বাড়িয়ে দিলো । কিন্তু অরণ্যর হাত লাবণীর গাল স্পর্শ করার আগেই থেমে গেলো । অরণ্যকে মরে গিয়ে প্রমাণ করতে হল যে সে ঠিকই লাবণীকে ভালবাসে ।
তিন দিন পরঃ আমি লাবনীর বাসায় গেলাম । লাবণী ওর রুমে দরজা লাগিয়ে বসে আছে । আমি ঢুকলাম রুমে । " লাবণী , অরন্য মারা যাবার পর ওর বেডে এই ডায়রিটা ছিল । এর শেষ পৃষ্ঠায় লেখা ছিল যে ডায়রিটা যেন তোমাকে দেয়া হয় । তাই দিতে আসলাম " , বলে আমি হাত বাড়ালাম ।
লাবণী আমার হাত থেকে ডায়রিটা নিলো । প্রথম পাতা উল্টানোর পরেই সেই লাল গোলাপটা দেখতে পেলো যা হাতে নিয়ে অরন্য লাবনীকে প্রেম নিবেদন করতে চেয়েছিল । গোলাপ মজে গেছে কিন্তু গোলাপের মধ্যে গন্ধ রয়ে গেছে । তিন বছর আগের গোলাপ এখনো গন্ধ রয়ে গেছে ! লাবণী গোলাপটাকে নাকের কাছে নিয়ে তীব্রভাবে গন্ধ নিতে চাইল । তারপর চোখ বন্ধ করে ফেললো । চোখ যখন খুলল তখন দুই ফোটা অশ্রু লাবণীর গাল বেয়ে ঝরে পড়ল । লাবণী পড়তে শুরু করল । প্রথম লাইন এইভাবে শুরু হল " একটু আগে লাবনী গেলো । রিকশায় করে , লাল জামা পড়ে ......... " । লাবনীর চোখ বেয়ে আবারও পানি ঝরল । এবার আরো বেশি পরিমাণে । লাবনী ডায়রিটাকে বুকের কাছে নিয়ে শক্ত করে ধরে কেঁদে উঠল । লাবণী কান্না থামাতে চাইল না । আজ যত অশ্রু ঝরার ঝরবে । আজ লাবনীর কাঁদার দিন । লাবণী আজ কাঁদবে ।

অসমাপ্ত ভালবাসাঃ

যেদিন তোমায় প্রথম প্রপোজ করেছিলাম সেদিন তোমার হাত থেকে বই গুলা পরে গেছিলো। ষ্মার্টনেস দেখাতে তরিঘরি করে বই গুলা তুলে দিতে গেছিলাম। কিন্তু নিজেই পিছলে তোমার ছড়ানো বইগুলার সাথে পরে রয়েছিলাম রাস্তায়। ঠিক সে মুহুর্তেই বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকা পাখিটা ইয়ের বোমাটা করে দিছিলো আমার একদম মুখে। মনের ভুলে রুমালটাও আনতে ভুলে গেছিলাম। তখন তুমি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে তোমার রুমালটা আমাকে দিছিলা। রুমালটা নিয়ে দৌড়ে পালানোর সময় তখনো আমার কানে আসছিলো তোমার সেই হাসির আওয়াজ.…

এপ্রিলের নয় তারিখ। সেদিন একটা গোলাপ দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে তোমায় আবার প্রপোজ করি। আমি ভাবতেও পারিনি তুমি আমাকে একসেপ্ট করবা।সেদিন আমার হাত থেকে মোবাইলটা পরে গেছিলো। মোবাইলটা নিতে গিয়ে উল্টে পরে গিয়েছিলাম। সেদিন তুমি আমার নাম দিছিলা 'উষ্টা বাবু'। তোমার সেই 'উষ্টা বাবু' ডাকটা শুনতে অনেক মিষ্টি লাগতো।
সেইদিন বৃষ্টির ভেতর তোমার হাত ধরে ঘুরে বেড়ানোর কথা মনে আছে তোমার?? আমি একটু সাইডে হিসু করতে গেছিলাম আর তোমাকে বৃষ্টির ভেতর একা দেখে একটা ছেলে ভাব নিতে ওর নিজের ছাতাটা তোমাকে দেয়। আমি তখন রেগে গিয়ে তোমার কাছে জোরে হেটে যেতে গিয়ে কাদায় পিছলে পরে যাই। তুমি ছেলেটিকে ছাতাটা ফেরত দিয়ে দৌড়ে ছুটে এসেছিলে আমার কাছে। বলেছিলে, 'আমার উষ্টা বাবু, উঠো বৃষ্টির ভেতর রাস্তায় ঘুমাতে নেই'
মনে আছে সেইদিন ঘুরতে গিয়ে তোমার বাবা কে দুর থেকে আসতে দেখি। দুজন দুই দিকে দৌড় লাগাই। তুমি তো ঠিকই দৌড় দিয়ে লুকিয়েছিলা কিন্তু আমি দৌড়াতে গিয়ে রাস্তায় উষ্টা খেয়ে পরি। আমার ঠোঁট কেটে রক্ত পরে। তুমি তখন বাবার ভয় আগ্রাহ্য করেই ছুটে এসেছিলা আমার কাছে। আমি তখন আমার রুমাল খুজছিলাম। কিন্তু সেইদিন ও ভুলে রুমাল এনেছিলাম না। তুমি তখন তোমার একহাতে রুমাল দিয়ে আমার ঠোঁট মুছে দিচ্ছিলা আর আরেক হাত দিয়ে আমার কাধে কিল মারছিলা। তোমার চোখে সেদিন প্রথম জল দেখেছিলাম। তোমার বাবা আমাদের পাশ দিয়েই চলে গেছিলেন। মুখে তার ছিলো মুচকি হাসি।
এপ্রিলের নয় তারিখেই আমাদের বিয়ে হয়। সেইদিন বাসর ঘরে সব মালা ছিড়ে ফেলেছিলা তুমি। সব ফুল বিছানার এক যায়গায় জড় করেছিলা। তারপর ফুলের স্তুপ অর্ধেক করে নিজের অর্ধেক থেকে আমার মাথায় ফুল ছিটিয়ে দিয়েছিলা আমিও তখন বাকি অর্ধেক ফুল তোমার মাথায় ছিটিয়ে দিয়েছিলাম।
মনে আছে বাসর ঘরে গ্লাসে করে শরবত খাওয়াতে গিয়ে পুরা গ্লাস আমার মাথায় ঢেলে দিছিলা!! মুছতে গিয়া দেখি রুমাল নেই। তুমি খুব হেসেছিলা। বলেছিলা তুমি নাকি আগেই জানতে যে আমার কাছে রুমাল থাকবে না। তখন তোমার রুমালটা দিয়ে আমাকে মুছে দিছিলা। সেদিন তোমাকে, তোমার হাসি অনেক সুন্দর লাগছিলো।
প্রতিদিন সকালে এককাপ চা বানাতে আমার জন্য। আমার অর্ধেক খাওয়া হলে তুমি কাপটা কেড়ে নিতা। নিয়ে বাকি অর্ধেক তুমি খেতা। বাজারে অনেক খুজে খুজে একটা বড় থালা কিনেছিলা তুমি। তুমি আমি সামনে বসে একসাথে সেই থালায় খেতাম। তুমি আমাকে খাইয়ে দিতা আমিও তোমাকে খাইয়ে দিতাম। আমাদের গ্লাস ও একটাই ছিলো।
বিয়ের প্রথম বর্ষ পুর্তিতে স্পেশাল কিছু চেয়েছিলা তুমি। আমি তো দিতেই চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি ই তো নিলানা। আর কখনো নিবেও না। কি এক অভিমান করে চলে গেছো আমাকে একা করে।
জানো এখনো সেই বড় থালায় খাবার খাই আমি। অর্ধেক খেয়ে বাকি অর্ধেক নষ্ট করি। সকালের সেই অর্ধেক কাপ চা এখনো পরে থাকে। কিন্তু বাকিটুকু আর তুমি কেড়ে খাও না।
জানো আজ এপ্রিলের নয় তারিখ। এই গোরস্থানে আসার পথেও পরে গেছিলাম আমি। কিন্তু 'উষ্টা বাবু' বলে কেউ আর আমাকে ডেকে তুলেনি। দেখো তোমার জন্য গোলাপ এনেছি। পরে গিয়ে একটু মাটি লেগেছে ফুলটায়। তোমার কি পছন্দ হয় নি? দেখো আমি কাঁদছি। চোখ মুছবো রুমালটাও আনতে ভুলে গেছি। কই আমার চোখের জল তো তুমি তোমার রুমাল দিয়ে মুছে দিচ্ছনা। এতোটাই পর করে দিলে আমায়? এভাবে আমাকে ভুলে একা একা কি করে আছো তুমি??
আমাদের বিয়ের প্রথম বর্ষ পুর্তি হবার কথা ছিলো আজকে। তুমি স্পেশাল কিছু চেয়েছিলা আমার কাছে। হ্যা আমি তোমাকে আজ সেটা দিবো। আমি ই তোমার সেই স্পেশাল কিছু। আজ নিজেকে গিফ্ট করবো তোমাকে। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা আমার জন্য আর সম্ভব না। আমি আসছি তোমার গিফ্ট হয়ে।
সকাল বেলা নিমতলা গোরস্থানের একটি কবরের কাছে মানুষের ভিড়। সেখানে গিয়ে দেখা গেলো একজন মৃত যুবক একটি কবর জড়িয়ে ধরে নিথর পরে আছে। যুবকের এক হাতে ছিলো একটি লাল গোলাপ, অপর হাতে ছিলো একটি বিষের বোতল।.

রবিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৩

মেয়েটার জন্য

নিশি কেমন একটু ইতস্তঃ করতে লাগলো । আসলে আমার প্রস্তাবটা ঠিক মেনে নিতে পারছে আবার ঠিক ফিরিয়েও দিতে পারছে না । লিয়া ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছিল, কথা শেষ করে নিশিকে বলল
-কি হল ? অপু আসবে তোর সাথে ?
নিশি চট করে একবার আমার দিকে তাকালো ! তারপর লিয়ার দিকে !
লিয়া বলল
-দেখ, বাইরের পরিস্থিতি কিন্তু ভাল না । তোকে একা ছাড়তে ঠিক মন চাইছে না । আর অপু যেহেতু ঐ দিকেই যাচ্ছে তোর সাথে যাক ! 
আমার মনে খানিকটা সন্দেহ দেখা দিল যে নিশি এখনই বলবে থাক আমি একাই যেতে পারবো ! কিন্তু আমি সেই সুযোগ কেন দিবো ওকে ! আমি বলল
-একটু আগে শাহবাগে পুলিশের সাথে অবরোধ কারীদের একটা সংঘর্ষ হয়েছে ! মিরপুর যাওয়ার পথে আরো এরকম বেশ কয়েকটা পয়েন্ট আছে আছে যেখানে ঝামেলা হতে পারে । 
লিয়া বলল
-আরে হ্যা ! বিপদের কথা তো বলা যায় না । তুই অপুর সাথে যা ! 
এই বার ইমোশনালী ব্ল্যাকমেইলের পালা !! আমি বললাম
-আচ্ছা আমার সাথে যদি নিশির রিক্সায় চড়তে অসুবিধা হয় তাহলে আমি বরং না যাই ! আমি ওর পেছন পেছন রিক্সা নিয়ে আসছি ! ঠিক আছে !
আমি জানতাম নিশি এবার কিছু বলবে ! নিশি বলল
-না মানে অসুবিধা কেন থাকবে ? আসো সমস্যা নাই ! একসাথেই যাই ! 
লিয়া কে রেখেই রিক্সায় উঠলাম । 
লিয়া বলল
-সাবধানে যাস ! আর অপু, মারামারি দেখে নিশিকে ছেড়ে পালিয়ে যেও না যেন !! মেয়েরা কিন্তু এই টাইপের ছেলে একটুও পছন্দ করে না । 
আমি কেবল হাসলাম । আমি ঠিকই জানি লিয়া কিসের ইংগিত দিল !!!
রিক্সা চলতে শুরু করলো !
জীবনের এই প্রথম কোন রাজনৈতিক দলকে একটা প্রাণ ঢালা অভিনন্দন জানাতে ইচ্ছা করছে । আজকে যদি অবরোধ না হতে নিশির সাথে কি রিক্সায় চড়টে পারতাম ??
অবরোধ কারী জিন্দাবাদ !!

ভার্সিটিতে একটা ক্লাস হওয়ার কথা ছিল । যদিও জানতাম হবে না কিন্তু আসতে হল । আসতে হল নিশির জন্যই । যদি মেয়েটা আসে ? ওকে না দেখলে কেমন জানি লাগে বুকের ভিতর ! বিশেষ করে ওর গোলাপী ঠোটের হাসি ! 
একবার অবশ্য মনে হয়েছিল যে নিশিও বোধ হয় আসবে না । কারন মিরপুর থেকে এতোদুর একটা মেয়ের পক্ষে আসা টা একটু কষ্টকর । কিন্তু দেখলাম নিশি এসেছে আগেই । মনে হয় ভার্সিটির বাসে । মনটা ভরে গেল আনন্দে ! যাক আজকের দিনটা্তে মেয়েটাকে আরো কিছুক্ষন মেয়েটাকে দেখতে পাবো ! 
কিন্তু ভাগ্য এতো ভাল হবে কে জানতো । ক্লাস হল না । ১১ টার ভিতরেই ডিপার্টমেন্ট ফাকা ! আমি বসে আছি নিশির জন্য ! নিশি বসে আছে কার জন্য কে জানে । 
এমন সময় লিয়া আর নিশিকে আসতে দেখলাম । নিশির খুব বেশি কথা না বললেও লিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক ভাল । আমার কাছে এসে লিয়া বলল
-এখন কি বিপদের পড়লাম বলত ? 
আমি বললাম
-কেন ? কি হল ?
-আরে মিরপুরের একটা বাসও নাই । নিশি কিভাবে বাসায় যাবে বল ? আমি ওকে বললাম আসতে হবে না ! তবুও মাত্তব্বারী করে আসছে ! এই দিনে কখনও ক্লাস হয় !!
আমি ঠিক এমন একটা সুযোগ খুজছিলাম । বললাম
-নিশি কি মিরপুর যাবা ? আমার একটু তালতলায় কাজ ছিল ! একসাথে চল তাহলে !!
লিয়া বলল
-পারফেক্ট ! তোকে একা ছাড়তে সাহস হচ্ছিল না । অপু থাকলে সমস্যা নাই । তুই অপুর সাথে চলে যা !! ও সাথে থাকলে আমি নিজেই নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো !!
নিশি চট করে আমার দিকে তকবার তাকাল ! 

রাস্তা বেশ ফাকাই ! অন্যান্য দিন এই ইংলিশ রোডটা পার হতে কম করেও ৩০ মিনিট লাগে ! কিন্তু আজকে পাঁচ মিনিটও লাগলো না ! এর কোন মানে আছে ! আর আজকে রিক্সায়ালাও যেন একটু জোরেই চালাচ্ছে !!
আমি রিক্সায়ালা কে বললাম 
-মামা এতো তাড়াহুড়া কেন করছেন ? একটি ধীরে চালান । 
রিক্সায়ালা বলল
-মামা রাস্তা ঘাটের অবস্থা তো ভালা না । জলদি জলদি যাওয়াই ভালা !

নিশি কিছুই বলছে না । চুপ করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে । যেন আমি এখানেই নেই ই !! 
আবার কানে হেডফোন লাগিয়ে গাল শুনছে ! 
আচ্ছা আমার দিকে কি একটু তাকানও যায় না ? মানলাম আমরা ভাল বন্ধু না কিন্তু ক্লাসমেট তো । প্রায় দুই আড়াই বছর আমরা একসাথে পড়াশুনে করছি ! তার উপর নিশি খুব ভাল করেই জানে যে আমি ওকে অনেক পছন্দ করি । ইনফ্যাক্ট আমি ওকে একবার প্রোপোজও করেছিলাম । 
আর নিশি এমন ভাবে বসে আছে যেন আমার গায়ে সাথে কোন রকম স্পর্শ না লাগে । কিন্তু রিক্সা একটু ঝাকি খেলেই নিশির সাথে আমা ধাক্কা লাগছে !! আমি জানি নিশির অস্বস্থি লাগছে ! আমার একটু ভালই লাগছে !! 
আমি ভেবেছিলাম নিশি হয়তো মিরপুর পর্যন্ত এই ভাবেই থাকবে । আমার সাথে একটা কথাও বলবে না । কিন্তু গুলিষ্টান পার হতেই নিশি হেড ফোন নামিয়ে রাখলো !
তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল
-তোমার তালতলায় কোন কাজ নাই, তাই না ?
আরে এই মেয়েটা কিভাবে বুঝে ফেলল কিভাবে ? আমার কিন্তু আসলেই তালতলায় কোন কাজ নাই ! আমি কেবল নিশির সাথে একসাথে রিক্সায় চড়ার জন্যই কথাটা বলেছিলাম । 
আমি কিছু বলতে যাবো নিশি আবার বলল
-মিথ্যা কথা বলবা না ! সত্যি কথা বল !
আমি বললাম
-সত্যি বললে রিক্সা থেকে নামিয়ে দেবে না তো ! 
নিশি কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-না ! দেব না ! 
আমি একটু হসেস বললাম
-না ! আমার কোন কাজ নাই !
-কেন ? জানতে পারি ? 
-দেখ রাস্তার অবস্থা কিন্তু আসলেই ভাল না ! তোমাকে একা ছাড়তে যেমন লিয়া ভাল লাগছিল না, আমারও ইচ্ছা করছিল না তোমাকে একা ছাড়তে । 
-তাই ? আচ্ছা মনে কর এখান মারা বাধলো ! তুমি কি করবা ? আমাকে বাঁচাতে তাদের সাথে গিয়া ফাইট করবা ? সিনামার নায়কের মত ?
আমার মনে হল নিশির যেন খানিকটা আমাকে উপহাস করছে ! 
আশ্চর্য এই মেয়েটা আগে আমার দিকে ঠিক মত তাকিয়ে থাকতে পারতো না, সেই মেয়েটা আজ কত কঠিন কথা বলছে । আমি বললাম
-সিনেমার নায়ক দের মত হয়তো মারামারি করতে পারবো না কিন্তু তোমার দিকে আসা প্রত্যেকটা লাঠির কিংবা ইটের আঘাত নিজের শরীরে লাগাতে পারবো !! তোমার পর্যন্ত আসবে না ! 
নিশি মনে হয় এটা শোনার জন্য ঠিক প্রস্তুত ছিল না । আমার দিকে তাকিয়েই রইলো কিছুক্ষন । আমি বললাম
-অবশ্য তোমার সাথে রিক্সায় চড়ার সুযোগটাও আমি ছাড়তে চাই নি । যদিও তোমার মনে হচ্ছে যে আমার গা দিয়ে মনে হয় গন্ধ বের হচ্ছে !!
-মানে ?
না মানে ! যে ভাবে বসেছ আছো ! মনে হচ্ছে আমার গায়ের সাথে একটু স্পর্শ লাগলে তোমার যেন কি না কি হয়ে যাবে !
এই কথা শুনে নিশি একটু হাসলো !!

হায়রে !!
বুকের ভিতর কি যেন হাহাকার উঠল !! এই ঠোটের হাসি দেখার জন্য নির্দ্বিধায় গাড়ীর সামনে লাফ দেওয়া যায় !!

আমি বললাম
-আরো একটা কারন অবশ্য আছে ?
-কি ? 
-তোমার হাসি আর তোমার চোখ ! তুম যখন হাসো না তোমার চোখ কেমন একটা দ্যুতি ছড়ায় !!
-আচ্ছা !! কিন্তু আমার যত দুর মনে পড়ে তুমি তো আমার ঠোট দুটি বেশি পছন্দ করতে !!

ঠোঁট ?!!!??!??!
আমি খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলাম । 
আমা রপ্রথম দিককার কথা মনে পড়ে গেল ! যখন নিশিকে প্রথম ভাল লেগেছিল । সত্যি বলতে কি নিশির সব কিছুই আমার পছন্দ ছিল কিন্তু সব থেকে পছন্দের ছিল তার ঠিঁট দুটো ! গোলাপী জেলির মত ! 
মনে হত .......!!
কেবল মনে হত ......!!
থাক আর বললাম না কি মনে হত !! 

মেয়েটার জন্য সত্যি সত্যিই চোখে ঘুম নষ্ট হল । ঠিক করলাম যে আর না !! এবর কিছু করতেই হবে ! মানে প্রপোজ করতে হবে !!
কিছু করতে হবে এই লাইনের আবার ভিন্ন অর্থ বের করবেন না ! 
মনে হল যে একটু ভিন্ন ভাবে প্রপোজ করি । সত্যি সত্যি একদিন ওর সামনে গিয়ে হাজির হলাম ! তারপর ওকে ডাকদিলাম !
-নিশি !!
আগে নিশি সব সময় একটু সংকুচিত হয়ে থাকতো ! আগে ঢাকার বাইরে থাকতো তাই ঢাকার পরিবেশের সাথে তখনও ঠিক তাল মিলিয়ে উঠতে পারে নাই !
নিশি খানিকটা ইতস্তঃ করে আমার দিকে এগিয়ে আসল ! বলল
-বলেন ?
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ।
-বলেন ? ক্লাস মেট দের কে কেউ আপনি করে বলে !!
নিশি কিছু না বলে চুপ করেই রইলো !
আমি বললাম
-তোমার ঠোঁট দুটো আমার খুব পছন্দ ! তোমার ঠোটে একটা চুম খেতে চাই । 
আমার কথা শুনে নিশি চমকে উঠলো ! 
আমি আবার বললাম
-কিন্তু এইভাবে তো চুমো খাওয়া যায় না ! আমি ঠিক করেছি আগে তোমাকে বিয়ে করবো ! বিয়ের পর তোমাকে চুম খাবো !!
এবার নিশির বিশ্ময় যেন আর একধাপ বেড়ে গেল । আসলে নিশির ধারনাই ছিল না য কেউ ওর সাথে এমন ভাবে কথা বলতে পারে । 
আমি আবার বললমা
-সমস্যা আছে ! এখন তো আবার বিয়েও করা যাবে না । প্রেম অবশ্য করা যায় ! কি বল তুমি ! আমি তোমাকে অফিসিয়ালী প্রপোজ করছি ! কি বল তুমি ? প্রেম করবে আমার সাথে ? 
এবার দেখলাম নিশির চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এল ! 
আমি বললাম
-আরে আরে কান্নার কি হল ? আমার প্রপোজাল ফিরিয়ে দেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে তোমার ! এখনও না বলতে পরো ! আমি কেবল আমার মনে কথা টুকু তোমার কাছে বললাম ! 
নিশি আর দাড়ালো না ! চলে গেল ! 

-কি হল কি ভাবছো ? 
রিক্সা ততক্ষনে শাহবাগে চলে এসেছে !! 
সামনেই আমাদের কে একটা একটা পুলিশ দাড় করালো ! আমাদের কে বলল
-আপনারা কোথায় যাবেন ?
আমি বললাম
-মিরপুরের দিকে !
-মিরপুর রোড ঘুরে যেতে হবে ? বাংলা মোটরের দিকে একটু ঝামেলা হচ্ছে । রিক্সা নিয়ে যাওয়া যাবে না !!
নিশি বলল
-এতো ঘুরে যেতে হবে ?
পুলিশ বলল
-কিছু করার নেই ম্যাডাম ! এই দিক দিয়ে আমরা যাওয়া যাবে না !
আমি বললাম
সমস্যা নাই ! আমরা ঘুরেই যাচ্ছি !!
আসলে আমার মজাই লাগছিল । যতই ঘুরে যাবো ততই আমি নিশির সাথে বেশিক্ষন এক রিক্সায় থাকতে পারবো !! এর থেকে আনন্দের কি হতে পারে ?? 

সাইম্সল্যাবের কাছে এসে দেখলাম নিশি আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার খুব মজা লাগছে তাই না ?
-হুম ! মজা তো লাগছে ! আমার পাশে এতো চমৎকার একজন মেয়ে বসে আছে আর সেই মেয়েটি একটু ভিত । বারবার মনে হচ্ছে কোন বিপদ হবে নাতো ! আবার সে এটা ভাবছে না খুব বেশি চিন্তার কারন নাই ! আমার পাশে একজন আছে যে সকল বিপদের হাত থেকে আমাকে বাঁচাবে !
নিশি মুখ ভেঙ্গালো আমাকে । তারপর বলল
-জি না !! আমি এসব কিছুই ভাবছি না !

ঐ দিন বিকালে লিয়া এসে হাজির আমার কাছে । পেছনে নিশি ! লিয়া সব সময় একটু উগ্র টাইপের মেয়ে ! কাউকে ঠিক ভয় পায় না ! আমার কাছে এসে বলল
-কি ব্যাপার তুই নিশি কে কি বলেছিস ?
-আমি ?
আমি খুব নিরিহ সাজার চেষ্টা করলাম । একটু হাসলাম । লিয়া বলল
-ঢং করবি না । ভাল করে বল ! কি বলেছিস ?
আমি বললাম
-আমি নিশি কে প্রোপোজ করেছি ! অফিসিয়ালী প্রোপোজ করেছি ! আশ্চর্য ভাল লাগলে বলবো না ?
লিয়া কিছু বলতে গিয়েও বলল না । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এর পর থেকে তুই নিশির ধারে কাছে আসবি না !! মনে থাকে যেন !!
আমি নিশির দিকে তাকিয়ে বলল
-আচ্ছা !

ঐ দিন নিশি আর লিয়া যখন চলে যাচ্ছিল আমি ওদের দিকেই তাকিয়ে রইলাম । কেন যেন মনে হল নিশি আমার দিকে ফিরে তাকাবে !! 
কয়েক কদম এগিয়েছে এমন সময় নিশি আমার দিকে ফিরে তাকালো !
হায় !!
কি সেই চোখের দৃষ্টি !!
আমার সেদিনই মনে হল নিশির ঐ ঠোটে .......

নিশি আমাকে এড়িয়ে চলতো ! আমি যেদিকে যেতাম ও সেদিকে যেত না ! কিন্তু আমি ওর পিছু ছাড়লাম না ! আমার সব কাজেই এমন একটা ছায়া থাকতো যে আমি ওকে পছন্দ করি ! ওকে একদিন ফেবুতে ফ্রেন্ড রিকু পাঠালাম । 
ভেবেছিলাম ও গ্রহন করবে না । কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম ও আমার ফেবু হয়ে গেল । 
মাঝে মাঝেই ওকে মেসেজ পাঠাতাম । বিভিন্ন কথা বলতাম । কিন্তু ও ঠিক জবাব দিত না । দিলেও কেমন একটা সাধারন ভাব থাকতো ! ভাল আছি !! ভাল নাই এই সব !!

তোমার জন্য এই এনেছি 
ভালবাসার রং 
অনেক হয়েছে, অনেক সয়েছি 
তোমার যত ঢং !
একবারও কি বলবে না তুমি
একটা মাত্র কথা !
দুরে দুরে থাকবে কত 
বাড়াবে বুকের ব্যাথা !
তোমার জন্য বসে আছি 
নিয়ে বুকে চোট !
কবে আসবে ভালবাসা 
আর তোমার মিষ্টি ঠোট !

একদিন এইটা স্টাটাস দিলাম । দেখলাম নিশি নিজেও সেটা লাইক দিয়েছে । ঐদিন ও আমাকে চ্যাটে নকও করলো !
আমাকে বলল 
-আমার এই রকম স্টাটাস দেওয়া ঠিক হয় নি !
আমি বললাম
-কেন ? কি হয়েছে ?
-তোমার ঐ কবিতা পড়ে আমার সব বান্ধবীরা হাসাহাসি করছে !! 
-কেন? খুব কি হাসির কবিতা লিখেছি ?
-দেখ তুমি যে রকম আচরন কর সবাই কিন্তু বুঝে যায় !
-কি বুঝে যায় ?
-বুঝে যায় যে .....।
-যে ????
নিশি কিছুক্ষন কিছু লিখলো না !! আমি লিখলাম
-জানো কষ্ট টা এই খানেই ! যাকে বোঝেতে চাই সেই বোঝে না !!

রিক্সা ভ্রমন আসলেই খুব উপভোগ করছিলাম । বারবার বিরোধী দল কে ধন্যবাদ দিটে লাগলাম !! যদি তারা অবরোধ না দিতো তাহলে তো এই চমৎকার রিক্সা ভ্রমন হত না !!

বিরোধীদল জিন্দাবাদ !! 

কিন্তু একটু বিপদ হয়েই গেল ! রিক্সা যখন আড়ং এর কাছে তখন দেখলাম কিছু পিকেটিং কারী এদিকে আসছে !! তারমনে আসলেই একটু বিপদে পড়তে হল ! রিক্সায়ালা রিক্সা থামিয়ে দৌড় মাড়লো ! আমি কোন মতে নিশির হাত ধরলাম । তারপর ওকে প্রার জোর করেই রিক্সা থেকে নামিয়ে দৌড় দিলাম ! সামনেই আড়ংয়ের সোরূম !! যদিও সাটারটা হাফ নামানো ছিল কিন্তু দেখলাম ওটার ভিরতকার গেট টা খোলা !! কোন মতে সাটার টা খুলে নিশিকে নিয়ে ভিতবে ঢুকে পরলাম !! দেখলাম আরো অনেকই আছে সেখানে !!
রিক্সা থেকে নামার সময় নিশির হাত ধরেছিলাম । এখনও সেটা ছাড়ি নি ! আর একটা জিনিস দেখলাম আমি যেমন নিশির হাত ধরে আছি নিশিও ঠিক তেমনি আমার হাত ধরে আছি ! আমি ওর হাতের চাপ অনুভব করতে পারছি !
কিছুক্ষন পরে আমি বললাম
-আচ্ছা আমি দেখে আসি বাইরে কি অবস্থা !
-না যেতে হবে না ! 
এই কথা বলে নিশি আমার হাতটা আর একটু জোরে চেপে ধরলো ! যেন আমাকে যেতেই দিবে না !!
আমার এটা ভাল লাগলো খুব !!
-আরে বাবা আমি দেখে আছি কি অবস্থা ? সারা দিন তো আর এখানে থাকা যাবে না ! তাই না !
-আমিও আসছি তোমার সাথে !!
নিশি নিজেও বেরিয়ে এল !!!

যখন আড়ং থেকে বের হলাম তখন রাস্তা বেশ পরিস্কার হয়ে গেছে ! আমাদের রিক্সায়ালা কে আসতে দেখলাম ! আবারও আমাদের রিক্সা ভ্রমন শুরু হল ! 
একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করলাম নিশি আমার হাতটা ধরেই রেখেছে !!
জীবন টা আসলেই খুব সুন্দর মনে হল !!
এই ভাবে যদি সারা জীবন নিশির হাত ধরে রাখতে পারতাম তাহলে কি চমৎকারই না হত !!!

নিশি যখন নিজের হাতটা সরিয়ে নিতে গেল তখন আমি ওর হাতটা ছেড়ে দিলাম না ! 
নিশি কেবল আমার দিকে তাকালো !! চোখে কিছু একটা জিজ্ঞাসা !!
আমি কেবল বললাম
-আমি কিছুতেই তোমার হাত ছেড়ে দিবো না !! যে কোন পরিস্থিতিই আসুক না কেন !!
নিশি অন্য দিকে তাকালো !!!

রিক্সা চলছে ! বাতাসে নিশির চুল উড়ছে ! আমি ওর দিকে লক্ষ্য করলাম !! ওর ভেজা ঠোট কেমন যেন একটু কাঁপছে ! 
আমার জন্য কি কাঁপছে ?

শুক্রবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৩

শুরু করতে চান অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ****


ইন্টারনেট থেকে ভালো আয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগি একটি মাধ্যম হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এই মাধ্যমে আপনি অন্য যেকোনো আয়ের উপায় যেমন অ্যাডসেন্স থেকেও বেশি আয় করতে পারবেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো এমন একটি বিষয় যার মাধ্যমে প্রথমত আপনি কারো বা কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা প্রমোট করবেন। এখন কোনো ভিজিটর যদি আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংকের মাধ্যমে ঐ পণ্য বা সেবা কিনে থাকেন, তাহলে আপনি একটি নিদ্দিষ্ট পরিমান কমিশন পাবেন। আপনার মার্চেন্ট অর্থাৎ আপনি যার পণ্য বিক্রি করছেন তিনি আপনাকে পেপাল অথবা অন্য কোনো পেয়িং মেথডের মাধ্যমে আপনার কমিশন পরিশোধ করবেন।

***অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে হলে***
--------------------------------------------------

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি দুইভাবে আপনার আয় শুরু করতে পারেন। একটি ব্লগ লিখে, অপরটি একটি নিশ সাইট তৈরি করে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে হলে প্রথমত আপনাকে প্রোডাক্ট নিয়ে ভালো মত রিসার্স করে নিতে হবে, এমন পণ্য টার্গেট করতে হবে যেটি ভিজিটররা শুধু পছন্দ করেন এটি নয়, এটি তাদের কেনা প্রয়োজন এমন পণ্য। ইন্টারনেটে বিভিন্ন টুলস, অ্যাফিলিয়েট প্রোড্রাক্ট ডিরেক্টরি, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আপনি আপনার কাংখিত পণ্যটি বাছাই করতে পারবেন, পাশাপাশি বুঝতে পারবেন বাজারের চাহিদা এবং যেটি ভালো সেলস এনে দিতে সক্ষম। এবার রেডি করতে হবে আপনার এফিলিয়েট সাইটটি, মাথায় রাখতে হবে সাইটটি যাতে এসইও ফ্রেণ্ডলি হয়। পেজ স্ট্রাকচার থেকে শুরু করে সবি যাতে থাকে অনুকূলে। এবার প্রয়োজন মাফিক সেলস পেজ তৈরি করতে হবে। এরপর আপনাকে যেই বিষয়ে ফোকাস করতে হবে তা হচ্ছে আপনার সাইটের ভিজিটরদের উপযোগি পণ্য আপনাকে প্রদর্শণ করতে হবে ও আপনার লেখনির মাধ্যমে ঐ পণ্য কেনায় তাদের উৎসাহিত করতে হবে যাকে আমরা এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ভাষায় বলে থাকি প্রডাক্ট রিভিউ (Product Review)। তারপর আপনাকে সাইটে ভালো ট্রাফিক আনার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে, ট্রাফিক না থাকলে প্রডাক্ট সেল করবেন কার কাছে !!! আমরা হয়তো অনেকেই জানি ট্রাফিক = টাকা ( Traffic = Money)। যখন আপনার ব্লগ বা সাইটে ভালো ট্রাফিক আসতে শুরু করবে তখন আপনি এই ট্রাফিকগুলোকে sells এ রূপান্তর করতে পারবেন আর আয় হবে হাজার হাজার ডলার। যার মাধ্যমে আপনি আপনার কাংখিত আয় করতে পারবেন। সৌভাগ্যবশত ইন্টারনেট হলো ভিজিটরের জন্য সঠিক পণ্যটি বাজারজাত করার একটি বিশাল তথ্যভান্ডার। এক নজরে দেখে নিন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর অভারল প্লানিং গুলো যা আমি সব সময় ফলো করি...

* প্রোডাক্ট রিসার্স (চাহিদা সম্পন্ন প্রফিট এবল পণ্য নির্বাচণ করবেন)
* কিওয়ার্ড রিসার্স (সার্চ ইঞ্জিন থেকে টার্গেটেড ভোক্তা প্রোডাক্ট বেস কিওয়ার্ড নির্বাচন )
* ব্লগ বা ওয়েব সাইট রেডি করা (সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি ব্লগ বা ওয়েব সাইট তৈরি করা)
* প্রোডাক্ট রিভিউ লিখা ( কাস্টমারকে পণ্য প্রদর্শণ ও লেখনির মাধ্যমে পণ্য কেনায় উৎসাহিত করতে)
* সাইটে টার্গেট ট্রাফিক আনা (এসইও, এসএমএম etc এর মাধ্যমে টার্গেটেড ট্রাফিক আনার ব্যবস্থা)

***পণ্য নির্বাচণ করবেন যেভাবে***
----------------------------------------

আপনাকে বিশেষ কোনো বিষয় বা ক্রাইটেরিয়ায় পণ্য অ্যাফিলিয়েটের জন্য নির্বাচণ করতে হবে। আপনি যদি ভুল পণ্য বা ক্রেতার চাহিদার বাইরের কোনো পণ্য নির্বাচণ করেন, সেক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিতভাবে ঐ পণ্যটি বিক্রয় করতে অসমর্থ হবেন এবং এমনকি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন। কোনো পণ্য প্রমোট করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে।

* পণ্য অবশ্যই আপনার সাইট সংশ্লিষ্ঠ হতে হবে
* আপনি প্রতিটি পণ্য বা সেবা বিক্রি করে কি পরিমাণ কমিশন পাবেন
* আপনার প্রমোট করা পণ্যটি অবশ্যই কোয়ালিটির দিকে উন্নত হতে হবে
* ভালো ট্রাফিক পাওয়ার উপযোগি পণ্য নির্বাচণ করতে হবে
* মাল্টি লেভেল টিয়ার অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম ব্যবহার করা ভালো
* পণ্য বা সেবা বিক্রিয়ের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি কমিশনের পরিমান বাড়তে থাকে তাহলে সেটাই ভালো।
* একবার বিক্রি হয় এমন পণ্যের চেয়ে যেসব পণ্য বা সেবা (যেমন ডোমেইন, হোস্টিং, একাধিক সংস্করণের ই-বুক প্রমোট করার জন্য) নির্বাচণ করা ভালো।

আপনি কোনো বিষয়ে পণ্য বা সেবা প্রমোট করার জন্য অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট ডিরেক্টরি, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার্স ফোরাম অথবা ঐ পণ্য বা সেবা উৎপাদনকারীর ওয়েব থেকে বিক্রির জন্য পণ্য বা সেবা খুঁজে পেতে পারেন। নিচে অ্যাফিলিয়েট পণ্য খোঁজার জনপ্রিয় ও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সাইটের ঠিকানা দেওয়া হলো।

Click Bank ( www.ClickBank.com )
Commission Junction ( www.cj.com )
Amazon Affiliates (affiliate-program.amazon.com)
E-junkie ( www.e-junkie.com )
AffiliateWindow ( affiliatewindow.com )
Plimus
CPAempire
Google Affiliate Network Program

***কিওয়ার্ড রিসার্স****
-----------------------------

সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে আপনার ব্লগে প্রমোট বা অ্যাফিলিয়েট করা পণ্য বা সেবা সম্পর্কে আপনার প্রকাশিত কনটেন্ট এ ভিজিটর আনতে পরোক্ষভাবে আপনার অ্যাফিলিয়েট পণ্য বিক্রি করতে কিওয়ার্ড রিসার্চ একটি জরুরী বিষয়। একটি প্রিন্সিপাল কিওয়ার্ড ছাড়া সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম দিকে আসা মুশকিল। এক্ষেত্রে আপনি কিওয়ার্ড রিসার্চ টুলের মাধ্যমে আপনার পছন্দের পণ্যটির ভবিষৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে পারেন। কিওয়ার্ড রিসার্চের সবচেয়ে প্রধান বিষয় হলো একটি লাভবান কিওয়ার্ড খুঁজে বের করা যেটি সম্পর্কে আপনি ব্লগ বা সাইটের কনটেন্ট ডেভেলপ করবেন। আর এর জন্য একটু ভালো গবেষনা করা প্রয়োজন। কিছু কিওয়ার্ড লিস্ট তৈরি করা প্রয়োজন। এখানে কিওয়ার্ড লিস্ট তৈরি করার কয়েকটি ধাপের কথা উল্লেখ করা হলো-

আপনার পণ্য বা সেবা সংশ্লিষ্ঠ কিওয়ার্ড হতে হবে
ফ্রেজিয়াল সার্চ কিরম হয় সেটাও দেখা জরুরি
কিওয়ার্ডটির অনেক চাহিদা থাকতে হবে বিশেষ করে একশন কিওয়ার্ড
সার্চে ঐ বিষয়ে যত কম রেজাল্ট দেখাবে তত ভালো
কিওয়ার্ডটির কম্পিটীশন কম থাকা বাঞ্চনিয়
সার্চ ইঞ্জিনে প্রতিযোগিতায় অবশ্যই আপনাকে সহজভাবে জিততে হবে।

***ব্লগ বা ওয়েব সাইট রেডি করা***
------------------------------------------

এই পর্যায়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার আগে প্লান করে নিন আপনি কিভাবে এফিলিয়েট করতে চান। ব্লগ লিখে নাকি নিশ সাইট তৈরি করে। সেই অনুযায়ী আপনাকে ব্লগ বা নিশ সাইট রেডি করতে হবে। আসুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য ব্লগ বা নিশ সাইট কি তা জেনে নেই...

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য ব্লগঃ সাধারণত একটি ব্লগ বিভিন্ন ক্যাটাগরি বা বিষয়ে লেখা হয়ে থাকে। কিন্তু যখন আপনি কোনো টপিক নিয়ে লিখবেন সেক্ষেত্রে আপনাকে সংশ্লিষ্ঠ বিষয়টি নিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ ও গবেষনা করতে হবে। উদাহরণ স্বরুপ আপনি যদি ওয়েব হোস্টিং নিয়ে ব্লগিং করেন, সেক্ষেত্রে আপনি হোস্টিং কোম্পানির সাথে অ্যাফিলিয়েট হিসেবে সাইন-আপ করতে পারেন এবং ওয়েব হোস্টিং নিয়ে আপনার লেখার মধ্যে ঐ কোম্পানির অ্যাফিলিয়েট লিংকটি বসিয়ে দিতে পারেন। একইভাবে আপনি ওয়েব মার্কেটিং, কিওয়ার্ড রিসার্চ, বিশেষ কোনো দেশে ট্রাভেলিং বা এমন কোনো নিদ্দিষ্ট বিষয়ে লিখতে পারেন। আপনি ব্লগে এই সম্পর্কিত পণ্য বা সেবার রিভিউ লিখতে পারেন, যেটা পড়ে ভিজিটররা আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংকের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা কেনার জন্য উৎসাহিত হতে পারেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য নিশ সাইটঃ নিশ সাইট তৈরি বা লেখালেখি ব্লগিং থেকে কিছুটা ভিন্ন। এক্ষেত্রে আপনাকে একটি নিদ্দিষ্ট বিষয়ের উপর সাইট তৈরি করতে হবে। উদাহরণস্বরুপ আপনি যদি ল্যাপটপের চার্জার নিয়ে লিখতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাওে এ সাইটের সব কনটেন্ট ল্যাপটপের চার্জার সংশ্লিষ্ঠ কনটেন্ট লিখতে হবে।

***প্রোডাক্ট রিভিউ লিখা***
-------------------------------

এই পর্যায়ে আপ্নাকে আপনার পন্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপনার সাইটে রিভিউ লিখতে হবে, আপনাকে জানাতে হবে কেন এই পণ্যটি একজন ক্রেতার জন্য উপযোগী। আপনি কোনো বিষয়ে ব্লগ আর্টিকেল, সাইট কনটেন্ট বা কোনো পণ্য বা সেবার রিভিউ লিখতে লিখে প্রমোট করতে পারেন। অথবা এ সংশ্লিষ্ঠ সেরা সাইটগুলো সম্পর্কে লিখতে পারেন। মোটকথা আপনার টপিকের উপর ভিত্তি করে লেখা হতে হবে, যেটি ভিজিটরদের ঐ পণ্য বা সেবা গ্রহণে আগ্রহী করবে।

***সাইটে টার্গেট ট্রাফিক আনা***
--------------------------------------

ব্লগ বা সাইটে ট্রাফিক আনার ক্ষেত্রে অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যম রয়েছে। সাইটে ট্রাফিক আনার ক্ষেত্রে অনলাইন মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব অনেক। এটি পেইড এবং ফ্রি দুইভাবেই হতে পারে। সুতরাং ট্রাফিক বৃদ্ধির জন্য উল্লেখযোগ্য স্টেপ গুলো নিচে দেখানো হোল...

সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন
পিপিসি
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
ইমেইল মার্কেটিং

আপনি যে মেথডটিই ব্যবহার করেন না কেনো সেটি যথার্থভাবে করতে পারলে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পাওয়া সম্ভব হবে। ট্রাফিক না থাকলে প্রডাক্ট সেল করবেন কার কাছে !!! আমরা হয়তো অনেকেই জানি ট্রাফিক = টাকা ( Traffic = Money)। যখন আপনার ব্লগ বা সাইটে ভালো ট্রাফিক আসতে শুরু করবে তখন আপনি এই ট্রাফিকগুলোকে sells এ রূপান্তর করতে পারবেন আর আয় হবে হাজার হাজার ডলার। যার মাধ্যমে আপনি আপনার কাংখিত আয় করতে পারবেন।প্রতিটি মেথড নিয়েই বিস্তর আলোচনা করা যায়। আশাকরি প্রতিটি বিষয়ে আলাদা লেখা নিয়ে এই ব্লগেই হাজির হবে খুব শিঘ্রই। নিজে নিজে এই মেথডগুলো সম্পর্কে ধারণা পেতে সংশ্লিষ্ঠ বিভিন্ন ব্লগ, বই, গ্রুপ ও ফোরামে যুক্ত হতে পারেন। এক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাবেন আশাকরি।